চাইল্ড থিম: যে শিশু বড়দের জীবন বাঁচায়

আজ (২৮ মে) ওয়ার্ডপ্রেসের বয়স ১৮ হল। বিশ্বে প্রাপ্ত বয়স্ক এই সিএমএস ব্যবহার করে বানানো ওয়েবসাইটের সংখ্যা প্রায় ৬৪ মিলিয়ন।

অফিসিয়াল হিসেব মতে, প্রতিমাসে অন্তত ৪০৯ মিলিয়ন মানুষ ২০ বিলিয়ন WordPress.com-এর পেইজ ভিজিট করেন। আর মাসে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারীরা ৭০ মিলিয়ন নতুন পোস্ট ও ৭৭ মিলিয়ন নতুন কমেন্ট পাবলিশ করেন।

আপনি যদি এই ৬৪ মিলিয়ন ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের একটিরও মালিক হন, এই পোস্টটি আপনার জন্য।

শিশুর জন্মের আগে…

একজন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি জানেন, ওয়ার্ডপ্রেস ডিজাইন ও ফাংশনালিটি নির্ভর করে ব্যবহৃত থিম ও প্লাগিনের উপর। (আমরা এই লেখায় কেবল থিম নিয়েই কথা বলবো।)

ওয়ার্ডপ্রেস ডিরেক্টরি কিংবা অন্য কোনো সোর্স (যেমন এনভাতো থিমফরেস্ট) থেকে যে থিমগুলো নিয়ে ব্যবহার করেন সেগুলো সব প্যারেন্ট (বা মূল) থিম।

আপনি যদি ডিজাইন ও ফাঙ্কশনালিটির স্বার্থে প্যারেন্ট বা মূল থিমটির function.php কিংবা style.css অথবা অন্য কোনো ফাইলের কোডে কোনো পরিবর্তন বা সংযোজন করেন, পরবর্তি আপডেট ইন্সটল হওয়া বা দেয়ার সাথে সাথে সব চলে যাবে।

এই একটি ভুলের কারণে হয়ত আপনার কয়েক সাপ্তাহ (কখনো কয়েক মাসের) শ্রম জলে যাবে।

এখন হয়ত আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে, 

এই আপদ থেকে বাঁচবার উপায় আছে কি?

শিশু ও শিশুর পিতৃপরিচয়

আপনার জন্য সুখকর সংবাদ হচ্ছে, হ্যাঁ, একটা উপায় আছে।

আর সেটা হচ্ছে, চাইল্ড থিম ব্যবহার করা।

এবার হয়ত আপনার মনের কোণে আরেকটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে,

চাইল্ড থিমটা আবার কোন আপদ?

(দেয়া স্বাভাবিক। এজন্য দুঃখে “পাগল মন মন রে কেন এত কথা বলে…” গান গাইতে হবে না।)

আসলে চাইল্ড থিম কোনো আপদ নয়, বরং সে আপনাকে মহা বিপদ থেকে বাঁচাবার রক্ষাকবচ।

শিশুর শক্তি ও আপনার ঝামেলামুক্তি

আপনার ভাজ হওয়া কপাল বলছে, আপনি ভাবছেন, এই শিশু থিমের এত শক্তির উৎস কী! সে সরকারি দলের লোক নাকি!

সহজকরে বললে,

আপনার সন্তানের জন্ম ও ভরসার স্থল যেমন আপনি, একটি চাইল্ড থিমের সৃষ্টি ও কর্যক্ষমতার পিছনেও প্যারেন্ট থিম।

একটি ব্লাঙ্ক/ফাঁকা চাইল্ড থিম নিজে তেমন কিছুিই করে না, বরং প্যারেন্ট বা মূল থিম থেকেই প্রতিটি জিনিস নিয়ে এসে দেখায়।

পরে আপনি আপনার প্রয়োজনমত চাইল্ড থিমটিতে কোড যুক্ত করতে পারেন। সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই কাজ করবে এবং প্যারেন্ট থিমের পরবর্তি কোনো আপডেটে হারিয়ে যাবে না।

শিশুর একটি স্যাম্পল

যত সহজকরেই বলি না কেন হয়ত উদহরণ ছাড়া কেউ কেউ বিষয়টি বুঝতে গিয়ে খানিকটা খটকায় পড়ে যাচ্ছেন।

আসুন, একটি উদাহরণ দেখি।

একটি চাইল্ড থিমে কমপক্ষে একটি ফোল্ডার থাকবে ( যেটা হবে চাইল থিমের ডিরেক্টরি ) তার মধ্যে অন্তত একটি style.css এবং আরেকটি functions.php ফাইল থাকবে।

মানে আপনাকে (অন্তত) নিচের তিনটি জিনিস তৈরি করতেই হবে:

  1. একটি চাইল্ড থিম ডিরেক্টরি
  2. একটি style.css ফাইল
  3. একটি functions.php ফাইল

আমরা সাধারণ ৪র্থ আরেকটি জিনিস রাখি, screenshot.png নামের একটি ছবি। এটি থিমের প্রিভিউ হিসেবে কাজ করে, জরুরি কিছু না। আমরা আমাদের স্যাম্পলটিতে এটি রাখবো।

আসুন নিজেরা একটা বানাই।

ধরে নিচ্ছি, Azad নামের একটি থিম আছে যেটা আমরা আমাদের সাইটে ব্যবহার করবো। তাই আমরা আমাদের চাইল্ড থিমটির ডিরেক্টরির নাম azad_child দিলাম।

তারপর ডিরেক্টরির ভিরত functions.php ও style.css নামে দুটি ফাইল তৈরি করলাম। নিচের ছবিটি দেখুন:

এখন আসুন ফাইলগুলোতে কী কী রাখতে হবে তা দেখি।

প্রথমেই style.css ফাইলটি অপেন করুন। এই ফাইলের উপরে সিএসএস মাল্টি-লাইন কমেন্টের মধ্যে থিম সম্পর্কিত তথ্যগুলো যুক্ত করে দিবেন। নিচের ছিবিতে দেখুন আমি কিভাবে যুক্ত করেছি:

এখানকার প্রতিটি তথ্য রাখা জরুরি নয়। আমরা অফিশিয়াল স্ট্যান্ডার্ড ফলো করেছি। পরবর্তিতে এর নিচে আপনি আপনার সমস্ত কাস্টম সিএসএস এ্যাড করবেন বা করতে পারবেন।

এখন আসুন functions.php ফাইলটি দেখি।

এই ফাইলেও আমরা তেমন কিছু এ্যাড করি নি। ফাইলের একেবারে উপরে স্বাভাবিক নিয়মে <?php রাখতে হয়েছে। তারপর ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে একটি মাল্টি-লাইন কমেন্ট যুক্ত করা হয়েছে। যদিও এটাও জরুরি কিছু নয়। পরবর্তিতে এর নিচে আপনি আপনার সমস্ত কাস্টম কোড এ্যাড করবেন বা করতে পারবেন।

পাশাপাশি সুন্দর একটি প্রিভিউ পাওয়ার জন্য screenshot.png নামের একটি ছবি ডিরেক্টরিতে রেখে দিলাম।

এই নিন রেডিমেইড একটি শিশু [downloadable zip file]

আমরা বিস্তারিতভাবে দেখেছি কিভাবে একটি ব্লাঙ্ক স্টার্টার চাইল্প থিম বানাতে হয়।

এখনও যদি আপনার কোনো কনফিউজন থাকে অথবা একটি স্যাম্পল দেখতে চান, নিচ থেকে জেনেরেটপ্রেস থিমের জন্য তৈরি চাইল্ড থিমটি নামিয়ে নিতে পারেন।

ডাউনলোড করতে নিচের ফমের্ আপনার নাম ও ব্যবহৃত জিমেইল এ্যাড্রেস লিখুন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফাইলটি আপনার মেইলে চলে যাবে।

সমাপ্তি, শিশুকে নিয়ে ভালো থাকুন

আশা করছি, লেখাটি থেকে ওয়ার্ডপ্রেসে চাইল্ড থিম কী, কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে তৈরি করতে হয়— আপনি জানতে পেরেছেন।

আলোচিত বিষয়গুলি নিয়ে আরো জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে পারেন:

  1. Child Themes | Theme Developer Handbook | WordPress Developer Resources
  2. Theme Functions | Theme Developer Handbook | WordPress Developer Resources
  3. Main Stylesheet (style.css) | Theme Developer Handbook | WordPress Developer Resources
  4. Using a Child Theme – Documentation
  5. Child Theme Basics | Create and Install Astra Child Theme

এ্যাস্ট্রা থিম নিজেরাই একটি চাইল্ড থিম তৈরি করার টুল বানিয়েছে। যদি আপনি এ্যাস্ট্রা থিম ব্যবহার করে থাকেন, টুলটি ট্রাই করতে পারেন। এরকম অনেক টুল ও প্লাগিন আছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে তৈরি করতেই পছন্দ করি। কারণ দুই মিনিটের কাজের জন্য দশ মিনিট খরচ করে টুল বা প্লাগিন খোঁজার কোনো মানে হয় না।

লেখাটি আপনার উপকারে আসলে অথবা কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। পাশাপালি অন্যদের উপকার হবে মনে হলে লেখাটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

4 thoughts on “চাইল্ড থিম: যে শিশু বড়দের জীবন বাঁচায়”

  1. অর্ধেক জিনিস মাথার উপর দিয়ে গেলো, কিছু জিনিস এখনো বুঝি নি। তবে জিনিসগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হবে এবং এটা খুবই জরুরি— এটা বুঝলাম।

    Reply

Leave a Comment