তথ্যের গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়

আমরা যারা ওয়েব ওয়াল্ডে কাজ করি প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাতে কাজে-অকাজে বিভিন্ন ব্লগ, ফোরাম ও ফেসবুক গ্রুপে ঢুঁ মারি।

ইন্টারনেট জ্ঞানের রাজ্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আবার খুঁজতে গেলেই হাজারটা বিকল্প আমাদের কাঁধে তথ্যের বোঝা হয়ে চেপে বসছে। আমরা ডজন ডজন লেখা দেখে কোনটা রেখে কোনটা পড়ব ভাবতে ভাবতে কোনটাই আর পড়তে পারি না।

লেখাগুলো হারিয়ে যায় ওয়েবের গভীরে, আমরা আবারও ডুবে যাই তথ্যের গভীরে। শত চেষ্টার পরেও এই গোলকধাঁধা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি না।

এমন সব ভুলভুলাইয়া থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতেই লেখাটির আয়োজন।

যথারীতি আমি কেবল আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আশা করি অনেকেই উপকৃত হবেন।

ধাঁধার সূচনা, আমার যন্ত্রণা

ছাত্র থাকাবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সাইবার ক্যাফেতে যেতাম। কাগজ-কলম কিংবা পেনড্রাইভ সাথে নিয়ে যেতাম। বহু কষ্টে কাজের (মোস্টলি ইংরেজি ভাষা বিষয়ক) কিছু খুঁজে পেলে নোট করতাম, প্রিন্ট করা লাগবে মনে হলে পেনড্রাইভে নিয়ে নিতাম।

তারপর চাকরিতে ঢুকলাম। একদিন বেতনের টাকা থেকে কিছু কিছু জমিয়ে একটি ক্ষীণকায় অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনলাম। যতক্ষণ সময় পেতাম তার পুরোটাই পিডিএফ কিংবা বিভিন্ন ব্লগ পড়ে কাটাতাম। এমনকি ক্লাসে পড়ানোর জন্য প্রস্তুতিটাও নেয়া হত অনলাইন থেকে। সময়টা সত্যিই অসাধারণ ছিল।

———-

[গুরুজির স্মরণে]

ঠিক যেদিন ফোন কিনি, ফেরার পথে আবদুল হক সাহেবের সাথে দেখা হয়। তিনি এক সময় আমাকে চিনতেন, মুক্তস্বরের সাহিত্য আসরে অনেক দেখা হয়েছে, আমার কিছু লেখার পাঠ সমালোচনাও তিনি করেছেন— এসব বলে-কয়ে অবশেষে যখন প্রমাণ করতে সমর্থ হলাম তিনি আমার গুরুজি, তিনি একত্রে চা খেতে রাজি হলেন।

তারপর তার হাত ধরে শিক্ষা ও সাহিত্যে অনেকটা পথ হাঁটা হয়। একদিন তিনি “নাই” হয়ে গেলেন, আমি ভিন্ন পথে চলা শুরু করলাম। এক সময় তিনিই এই পথ ও পথ শেষের গন্তব্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

———-

কয়েক বছর পর একটি ল্যাপটপ কেনার তাওফিক হল। ক’দিন পর জিপির একটি মডেমও নেয়া হল। তারপরই গোলকধাঁধায় আটকে গেলাম। প্রতিদিন ধাঁধা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছিল। রাত জাগা শুরু করি। তবুও কোনো কূল পাই না। এই ধারা অব্যাহত ছিল।

কিন্তু যখন চাকরি ছাড়লাম আর রাত-দিন পিসির সামনে কাটাতে শুরু করলাম, সমস্যাটি থেকে মুক্তির পথ বের করা ছাড়া উপায় ছিল না।

প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় অনেকগুলি সমাধান পেলাম। নিচে মাত্র চার ধরণের চারটি টুল/এ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে লিখছি।

ধাঁধার প্রথম সমাধান

আপনি যদি রেগুলার বিভিন্ন ব্লগের লেইটেস্ট কন্টেন্টগুলো এক প্লেটে সুন্দরকরে সাজিয়ে খাওয়ার জন্য পেতে চান, তাহলে ফিডলি ব্যবহার করতে পারেন।

এখানে আপনি একেকটি Feed এর আন্ডারে আপনার পছন্দের সব ওয়েবসাইট যুক্ত করে রাখতে পারনে।

ধরুণ আপনি প্রতিদিন ১০টি SEO ব্লগে একবার হলে উঁকি দিতেন। তারপর সেখানকার নতুন পোস্টগুলি দেখতেন বা পড়তেন। ফিডলি ব্যবহার করলে আপনাকে আর ১০টি ব্লগে একে একে গিয়ে নতুন পোস্টগুলি খুঁজতে হবে না, উল্টো সবগুলো লেখা আপনার তৈরিকৃত Feed-এ এসে জমা হয়ে থাকবে।

এই কাজটি অনেকভাবে করা যায়। অল্পস্বল্প কোডিং জানলে আপনি নিজের টুলও বানিয়ে নিতে পারবেন। আমি এখন আরো দুটি মাধ্যম ব্যবহার করছি। তবে ফিডলিই সেরা ও সহজ মনে হয়েছে।

ধাঁধার দ্বিতীয় সমাধান

এটির নাম পকেট

তবে আপনার টাকা রাখার পকেট না। ঐ পকেটে তথ্য রাখলে সেটাও পকেটমার নিয়ে নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। রিস্ক নেয়া মোটেও ঠিক হবে না।

আপনার জামার পকেটে যেভাবে টাকা-পয়সা-মোবাইলফোন সব রাখতে পারেন, এই পকেট এ্যাপে সব ব্লগের সব লেখা রাখতে পারবেন। আবার যখন ইচ্ছে পকেট থেকে বের করে পড়তে পারবেন। হারিয়ে যাবার কোন ভয় নেই।

যদি মোবাইল এ্যাপটি ব্যবহার করেন। একবার কন্টেন্টগুলো সিঙ্ক্রোনাইজ হয়ে যাবার পর আর নেটের প্রয়োজন নেই। যেখানেই থাকুন নেট ছাড়া যত খুশি পড়তে পারবেন।

আবার যখন পড়তে ইচ্ছে করবে না শুনতেও পারবেন। মানে আপনাকে পড়ে শোনাবে। বেশ কয়েকটি পাঠক (ভয়েস) আছে। কত্ত মজা!

পকেট এ্যাপটি মজিলা ফ্রি সফটওয়্যার কমিউনিটির একটি প্রডাক্ট। সুতরাং এই পকেট টাকাখেকো নয়। প্রিমিয়াম ভার্সন থাকলেও আমি বছরে লাখ খানেক আর্টিকল পড়ছি শুধু ফ্রি ভার্সন ব্যবহার করেই।

ধাঁধার তৃতীয় সমাধান

ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপে চমৎকার সব লেখা প্রকাশ হয় প্রতিদিন। অনেক সময় সময়ের অভাবে সব লেখা পড়ার সময় ও সুজোগ নাও পেতে পারেন। এভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা হারিয়ে যেতে পারে।

এর চমৎকার একটি সমাধান হচ্ছে, ফেসবুকের সেইভড। এটি আসলে কোনো বিশেষ এ্যাপলিকেশন নয়, ফেসবুকের একটি ফিচার বা সার্ভিস।

আপনি এটি খুঁজে পাবেন ফেসবুকের হোমপেইজের বাম সাইডবারের নিচের দিকে।

যেকোনো পোস্টের ডানের উপরের তিন বিন্দুতে ক্লিক করলে প্রথম অপশনটি দেখবেন Save Post। ওখানে ক্লিক করার পর ‍আপনার পূর্ববর্তি Collection ও নতুন Collection তৈরি করার অপশন আসবে।

কালেকশনের প্রাইভেসি কন্ট্রোল করা যায়, এবং এতে যত খুশি তত আইটেম যুক্ত করা যায়। পরবর্তিতে পড়ার জন্য ফেসবুকের জরুরি পোস্টগুলো এক জায়গায় সেইভ রাখতে এর চেয়ে ভালো কোন বিকল্প নেই।

ধাঁধার চতুর্থ সমাধান

এই পদ্ধতিটা খানিকটা ভিন্ন। এটা এ্যাপ্লিকেশন নির্ভর নয়, স্কিল নির্ভর।

আপনি যখনই নতুন কোন ভালো রিসোর্স পাবেন সেটি নিচের দু‘টির একটি জায়গায় রাখতে পারেন। উভয় জায়গায় রাখার পদ্ধতি ভিন্ন।

এক. OneNote

দুই. Notepads (Notepad নয় কিন্তু!)

OneNote খুবই সুন্দর একটি এ্যাপ।

এখানে প্রথমে একটি Notebook তৈরি করবেন। তারপর ‍Section তৈরি করবেন। সর্বশেষে একটি Page তৈরি করবেন।

একটি উদাহরণ দিচ্ছি,

  • Technical SEO (নোটবুক)
  • JavaScript Optimization (সেকশন)
  • Gist of Abdul Aouwal Vai’s Post (পেইজ)

তারপর পেইজে একটি পোস্ট বা বিষয় নিয়ে পড়া শেষে সার কথাটা নোট করবেন। পাশাপাশি নিচে সোর্সটিও রেখে দিবেন যাতে প্রয়োজনে আপনার নোট ও মূল লেখা ক্রসম্যাচ করতে পারেন।

Notepads এ্যাপটি আমার পিসিতে এখন সব সময় খোলা থাকে। আর এর কতটি ট্যাব খোলা থাকে তা গুনে করে বলতে হবে।

উইন্ডোজের সাথে আসা Notepad এ্যাপ আর Notepads এ্যাপটির ডেভলপার টিম এক‌ই।

আপনি আপনার সুবিদে মত সেটিংস কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন। আমার সেটিংস নিচের মত:

  • Wrap Word
  • Highlight Misspelled Words
  • Highlight Current Line
  • Display Line Number
  • Dark Mode
  • 50% Background Tint Opacity
  • Show Status Bar
  • Enable Session Snapshot (এটা অবশ্যই চালু রাখবেন, অনেক উপকারি)
  • Default Search Engine Google

এখানে নোট রাখার উপায় খানিকটা ওয়াননোটের মতই। তবে এখানে ওখানকার মত সাজিয়ে রাখার সুজোগ নেই।

এভাবে নোট রাখতে পারেন,

ফাইলটির নামকরণ Technical_SEO_by_Abdul_Awal.txt করুন এবং ফাইলটি ‍SEO Tutorial অথবা Technical SEO Tutorial নামের একটি লোকাল ফোল্ডারে রাখুন।

তারপর ফাইলটির একেবারে উপরে Source: [POST URL HERE] রেখে দিন।

তার নিচে কয়েকটি লাইন ফাঁকা রেখে মূল পয়েন্টগুলো নোট করুন।

সবশেষে ফাইলটি সেইভ করুন। না করলেও সমস্যা নেই। কারণ Enable Session Snapshot চালু রাখায় পরবর্তিতে এ্যাপটি চালু করার সাথে সাথেই নোটটি সামনে পাবেন। আর বারবার দেখার কারণে যে রিভাইজ হবে তাতে বিষয়টি পরবর্তিতে খুব সহজে ভুলে যাবার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে।

যাই যাই, গুডবাই!

হাজার শব্দ লিখে ভাবছি এই লেখাটি আদৌ কারো উপকারে আসবে কিনা।

লেখাটির ভাবনা মাথায় আসে সার্পকি গ্রুপে আব্দুল আওয়াল ভাইয়ের একটি পোস্টের নিচে একজনের কমেন্ট দেখে।

লেখাটি যদি কারো উপকারে আসে রাত জেগে লেখা সার্থক।

কোন ভুল পেলে নিচে জানাতে পারেন, ইনশাআল্লাহ শুধরে নিব।

নিজে ভালো থাকুন, অন্যদের ভালো রাখুন এবং প্রতিদিন জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করুন।

3 thoughts on “তথ্যের গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়”

  1. এতো সুন্দর করে কুয়াশা গুলো মুছে দিলেন, এবার ফিডলি-কে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ
    আর আপনার পকেটের খবর অনেক আগে থেকে আপনার কাছ থেকেই জানা আছে। আই মিন পকেট এপ্স এর কথা বলতেছি।
    আবারও ধন্যবাদ

    Reply
  2. আমি তৃতীয়টি ব্যাবহার করতে অভ্যস্ত। বাকিগুলো নিয়ে ভাবা হয়নি কখনো। কিন্তু ফেসবুকে অনেক পোস্ট অনেক সময় বিভিন্ন কারণবসত আনএভিলাবল হয়ে যায়। তাই আমি ভাবসিলাম অন্য কোনো উপায় খুঁজতে হবে সংরক্ষনের জন্য। আপনার পোস্ট থেকে আইডিয়া পেলাম।

    থ্যাংক ইউ ভাইজান।

    Reply
  3. Thank you, Bhai. Onek valo liksen! Age shudu Facebook save feature ta use kortam. Akhon chesta korbo onno gulao use korar.

    Reply

Leave a Comment