”রাইটারকে কিভাবে ইন্সট্রাকশন দেয়া উচিত?” কিংবা ”কিভাবে গাইড করলে রাইটার সবচেয়ে ভালো লেখাটি দিতে পারবেন?”— কন্টেন্ট নিয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহের মধ্যে খুব সম্ভব এটা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়।
একটি গ্রুপে উপরের পোস্টটি করার পর সেইম প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি পেয়েছি।
এই পোস্টে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উদাহরণসহ যতটা সম্ভব বিস্তারিতভাবে লেখার চেষ্টা করব। আসুন, কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
আমার প্রথম গাইড যেমন ছিল
অনেকেই জানেন আমার রাইটিং ক্যারিয়ারে আসা রতন ভাইয়ের হাত ধরে। তিনি আমার শিক্ষক। সরাসরি তার কাছ থেকে তিন মাস পাঠ গ্রহণ করেছি।
তিনি একদিন বললেন, ”আপনি যেহেতু ইংরেজি ভালো জানেন চাইলে তো রাইটিং করতে পারেন।” আমি গাইড করতে অনুরোধ করলাম।
যতদূর মনে পরে পরের দিন তিনি ওয়েব কন্টেন্টের বেইসিক কিছু বিষয় আলোচনা করার পর দেখার জন্য তার একটি সাইটের এ্যাড্রেস শেয়ার করলেন। পাশাপাশি দেশি এক মার্কেটারের ইংরেজি দুটি লেখা প্রিন্ট করে দিলেন।
পরের সাপ্তাহে বোধয় তিনটির মত লেখা জমা দিয়েছিলাম।
লেখা দেখে তিনি প্রশংসা করেছিলেন। চূড়ান্ত অবাক করে দিয়ে অনেকগুলো টাকাও দিয়েছিলেন।
আমি তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে উভয় জগতে উত্তম বিনিময় দান করুন।
শুধু কি গল্প বললাম?
না, শুধু গল্প বলি নি, আরো কিছুও ছিল।
হয়তো খেয়াল করেছেন, তিনি একজন নবীন রাইটারকে গতানুগতিক ধারার কোন ইনস্ট্রাকশন ফাইল না দিয়ে লিখতে বলেছেন। আমার মনে হয় তিনি এমনটা না করলে আমার রাইটার হয়ে ওঠা হত না।
তাহলে কি রাইটারকে কোনো গাইড দিবো না?
আপনার মনে উপরের প্রশ্নটি আসা খুবই স্বাভাবিক।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, এখনকার মার্কেটারদের সবচেয়ে বড় ভুল যে তারা রাইটারদের ইনস্ট্রাকশনের জালে পেচিয়ে ফেলেন!
তারা অনলাইন থেকে কপি করে গাইড লিখেন। এর-ওর কাছে থেকে গাইডের টেমপ্লেট জোগাড় করে সেটা রাইটারদের পাঠিয়ে দেন।
গাইড অবশ্যই দেয়া উচিত। কিন্তু এভাবে নয়।
ওমক ভাইয়ের গাইড দিলে ক্ষতি কী?
এমন কোনো গাইড ফাইল পাওয়ার সাথে সাথে একজন রাইটার বুঝে ফেলেন তার ক্লায়েন্টের দৌড় কতদূর।
তাছাড়া একটি কপিকৃত গাইড ফাইলে আদৌ আপনার গবেষণা ও চাহিদার প্রতিফলন থাকবে না।
ফলে হয়ত রাইটার আপনাকে নাচাবে, নয়ত আপনি নিজেই নাচবেন।
বিশ্বাস করেন মশাই, এই নিত্যকর্ম মোটেও সুখকর নয়।
আমরা যারা অনেক রাইটার রেখে কাজ করাই তারা প্রতিজন রাইটারকে ভিন্নভাবে গাইড করি।
আবার প্রজেক্ট টু প্রজেক্ট গাইডের বিষয়টি অনেক ভ্যারি করে।
অনেক সময় কন্টেন্ট স্ট্রাকচারসহ প্রাথমিক বিষয়গুলো ক্লায়েন্টের সাথে আলোচনা করে ফাইনাল করতে আমার ১ থেকে ২ সাপ্তাহ চলে যায়।
তারপর ক্লায়েন্ট ফাইনাল ফাইল দিলে সব কিছু দেখা ও যাচাইয়ের পর আমাকে রাইটারের জন্য তার উপযোগী গাইডলাইন তৈরি করতে হয়।
গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তাতির পরে বলছি।
তার আগে বলুন তো,
এতটুকু পড়ার পর আপনার কী মনে হয়— আমার এই পার্সনালাইজড গাইডলাইন আর আপনার কপিকরা টেমপ্লেটমার্কা গাইডলাইনের মধ্যে কোনটি বেটার হবে?
আমি রাইটারদের যেভাবে গাইড করি
শুরুতেই বলে রাখি, আমি একটি প্রজেক্ট একজন রাইটারকে দেই। একান্ত বাধ্য না হলে এর ব্যতিক্রম হয় না।
রাইটারকে প্রজেক্টের সবগুলো ফাইল পাঠিয়ে একবার চোখ বুলাতে বলি।
দেখা শেষ হয়েছে বলে জানালে স্কাইপে কল দিতে বলি। আমাদের আলোচনার বিষয়গুলো সাধারণত এমন হয়:
- প্রজেক্টটি কেমন হবে
- ক্লায়েন্ট বা আমার চাহিদা কী
- টার্গেট অডিয়েন্স কারা ও কেমন
- কন্টেন্টগুলোর স্ট্রাকচার কেমন হবে (প্রয়োজনে লাইভে একটি করে দেখাই)
- [কখনো] একটি স্যাম্পল স্ট্রাকচার দেখানো (আমি আগেই তৈরি করে রাখি, প্রয়োজনে দিয়ে দেই)
- রিসার্চ করার সময় বিশেষ কিছু বিবেচনায় রাখতে হবে কিনা (মনে রাখা কঠিন, তাই আলোচনা শেষে এটার নোট ফাইল দিয়ে দেই)
- বিশেষ কোনো কিওয়ার্ড বা প্রডাক্টে বিশেষ কিছু খেয়াল রাখতে বা ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে কিনা
- কোন কোন জায়গায় তিনি সমস্যা ফেইস করার সম্ভাবনা আছে (করলে যোগাযোগ করে সমাধান জেনে নেন)
- কোথাও শব্দ সংখ্যা বা কিওয়ার্ড পজিশনিং স্ট্রিকলি মানতে হবে কিনা
- তারপর তার প্রশ্নগুলো শুনি ও সেগুলোর জবাব দেই
* বুঝতেই পারছেন ক্ষেত্র বিশেষে কিছু জিনিস বাড়ে বা কমে। এটা স্বাভাবিক।
এরপর যা হয়
এরপর রাইটার “প্রাথমিক রিসার্চ” শুরু করেন। প্রাথমিক রিসার্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত লিখব ইনশাআল্লাহ।
প্রাথমিক রিসার্চে রাইটারের সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। আবার সহজ ও পরিচিত নিশ হলে একদিন, আবার জটিল ও ভুতুড়ে নিশ হলে দশ দিনও লাগতে পারে।
প্রাথমিক রিসার্চ শেষে প্রয়োজনে রাইটারের সাথে একটি আলোচনা হয়। এমনটা খুব কম হয়।
এরপর রাইটার একটি কিওয়ার্ড নিয়ে রিচার্স শুরু করেন; শুরু হয় লেখার কাজ।
লেখক স্বাধীনভাবে লেখেন। কারো কাজের সময় নির্ধারিত নয়। আমরা এসব ক্ষেত্রে শতভাগ স্বাধীনতা দেই, যাতে লেখকের সৃজনশীলয় কোনো প্রভাব না পড়ে।
ফার্স্ট ড্রাফট থেকে ফাইনাল কপি তৈরি করতে গিয়ে রাইটার বেশ কয়েকবার এডিট করে ফেলেন।
আমি মিনিমাম তিন বার এডিট করতে বললেও এটা সাধারণত কেউই মানে না; কমবেশি হয়।
এখানে বেশ কিছু স্টেপস ফলো করা হয়। অবশ্য সেগুলো এখানে আলোচনা করলে পদ্মা সেতুর কাহিনি হয়ে যাবে।
কিভাবে এডিটিং ও প্রূফরিডিং করবেন– তা নিয়ে আরেকদিন খিচুরি পাকানো যাবে। আজ পান্তাই খেতে থাকুন।
রাইটারেরর কাছ থেকে এডিটর লেখা পেয়ে ম্যানুয়ালি পুরোটা চেক করেন। কাজটা সহজ নয়, তবুও করতে হয়। এখানেই আসলে টক কাঁচা আমগুলো পেকে অমৃত হয়।
শেষ ধাপে এক বা একাদিক টুলের সাহায্যে লাস্ট মিনিট চেক করা হয়। সাজেশনগুলো ম্যানুয়ালি চেক করে নেয়া বা বাদ দেয়া হয়। সাধারনত ০১% থেকে সর্বোচ্চ ১০% মত নেয়া সম্ভব হয়।
সর্বশেষে কপি চেক করে জমা দিয়ে দেয় হয়। এটা স্কিপ করে কয়েকবার বেশ খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। থাক, পান্তাভাতে আর করোল্লা না দেই!
আর নয় সহস্র রজনীর কাহিনী
উপরে রাইটারকে গাইড দেবার কথা লিখতে গিয়ে সংক্ষেপে লেখা জমা দেয়া পর্যন্ত নিয়ে আলোচনা করেছি উদ্দেশ্যপ্রণদিতভাবেই।
কেন?
যাতে কোথায় ও কিভাবে গাইড করছি বা ছাড় দিচ্ছি সেটা বুঝতে পারেন।
আশা করি লিচুর চেয়ে লিচুর বিচি বড় হয়ে যায় নি।
একটি ছোট উদাহরণ দেই
“বেস্ট পচা আলু” নিয়ে উদাহরণ দিবো না। ওটা গুরুজনদের কাজ।
আমি বরং এই মুহূর্তে সামনে যে লেখাটি আছে সেটা নিয়েই বলি।
লেখাটির টাইটল হচ্ছে, “What is Sharia Law?”.
রাইটারকে টাইটলটি দেয়ার সাথে সাথে একটি সাজেসটিড স্ট্রাকচারও দিলাম। নিচে হুবহু সেটি তুলে দিলাম:
- Introduction
- The Origins of Islamic Law
- What is sharia law really?
- What is sharia law based on?
- Understanding Sharia Law
- Sharia Law Examples — List of Key Rules
- Five Myths about Islamic Sharia
- Sharia Law Countries
- Sharia Law in Saudi Arabia
- Sharia Law in Malaysia
- Sharia Law in Nigeria
- Sharia Law in Pakistan
- Sharia Law in India
- Sharia Law in Bangladesh [other countries if you want]
- Answering some questions like “Is Sharia law ….?”. (5-7)
- Conclusion
নিচে নোটটির একটি স্ক্রিনশটও দিচ্ছি।
এটি মাত্র মিনিট দুই-চার খরচ করে করা। ফাইনালাইজড কিছু নয়। রাইটার রিসার্চ শেষে নিজ থেকে বা আমার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনানুযায়ী এতে কম বা বেশি পরিবর্তন আনতে পারেন।
আমি চাইলে একটি বায়িং কিওয়ার্ড দিয়েও উদাহরণ দিতে পারতাম। ইচ্ছে করেই সেটা এড়িয়ে গিয়েছি। আমি চাই আপনারা আপনাদের মেধা ব্যবহার করে বাকিটা বুঝে নিন। আমার কাজ এখানেই শেষ।
শেষের কথা, কথার শেষ
এখানে রাইটারকে ইন্সট্রাকশন দেয়ার বা গাইড করার আমার অভিজ্ঞতা ও কর্মপদ্ধতি যতটা সম্ভব সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
এই বিশাল জগতে আমি নিজেকে একজন দুর্বল ছাত্র মনে করি। আমার জানার পরিধি নিতান্তই কম।
সুতরাং ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক। লেখাটিতে কোনো ভুল পেলে জানাবেন, ঠিক করে নিবো।
আর কোনো জিজ্ঞাসা বা পরামর্শ থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন।
আল্লাহ তাওফিক দিলে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। এক্ষেত্রেও আপনার কোন পরামর্শ থাকলে জানাতে কার্পণ্য করবেন না।
আল্লাহ সবাইকে কর্মক্ষেত্রে সফলতা দান করুন— এই কামনা করছি।
মাশাআল্লাহ! ভাই দারুন লিখেছেন। আশা রাখছি লেখাটি পড়ে আমিসহ অনেকেই উপকৃত হতে পারবে। আপনার পরবর্তী লেখা প্রাপ্তির অপেক্ষায় রইলাম। আল্লাহ হাফেজ
এডিটিং এবং প্রুফরিডিং নিয়ে একটি লিখা আশা করছি
ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর লেখার জন্য।
সুন্দর লিখেছেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন
আলহামদুলিল্লাহ ভাই ভালো লিখেছেন। জাঝাকাল্লাহ খাইরান।❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
মাশাআল্লাহ। উপকারী লেখা।
আর্টিক্যাল রাইটিং নিয়ে অল্প কথায় চমৎকার একটা গাইডলাইন। অল্প কথা বললাম এই কারণে যে, আরও বিস্তারিত আশা করেছিলাম লেখাটা।:)
যাইহোক, আশা করছি ভবিষ্যতে এরকম লেখার ধারা অব্যাহত থাকবে। ধন্যবাদ, ভাই।
মাশাআল্লাহ ভাই, অনেক সুন্দর লিখেছেন।
মাশাআল্লাহ
অসাধারন। ভাই লিখতে থাকেন। পড়ে আমরা ধন্য হই।
এডিটিং এবং প্রুফরিডিং নিয়ে একটি লিখা আশা করছি।
ইনশাআল্লাহ লেখার চেষ্টা করবো।